BDFile Telegram channel

26‏/04‏/2023

একরাতে দু’বার বিতর পড়া বিধিসম্মত নয়। 

عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ قَالَ زَارَنَا طَلْقُ بْنُ عَلِيٍّ فِي يَوْمٍ مِنْ رَمَضَانَ وَأَمْسَى عِنْدَنَا وَأَفْطَرَ ثُمَّ قَامَ بِنَا اللَّيْلَةَ وَأَوْتَرَ بِنَا ثُمَّ انْحَدَرَ إِلَى مَسْجِدِهِ فَصَلَّى بِأَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا بَقِيَ الْوِتْرُ قَدَّمَ رَجُلا فَقَالَ أَوْتِرْ بِأَصْحَابِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لا وِتْرَانِ فِي لَيْلَةٍ

ক্বায়স বিন ত্বল্‌ক্ব বলেন, একদা রামাযানে আমার পিতা ত্বল্‌ক্ব বিন আলী (রাঃ) আমাদের নিকট আগমণ করেন, সন্ধ্যা হয়ে গেলে তিনি আমাদের নিকটেই ইফতার করেন। অতঃপর আমাদের নিয়ে তারাবীর নামায পড়েন এবং বিতর পড়েন। তারপর তাঁর নিজের মসজিদে গিয়ে লোকদের নিয়ে ক্বিয়ামুল্লায়ল করেন। যখন বিতর নামায বাকী ছিল 

তখন তিনি একজন লোককে আগে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, লোকদের নিয়ে বিতর পড়ে নাও। কেননা আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একরাতে দু’বার বিতর নেই। 

অতএব কোন মুসলমান যদি প্রথম রাতে বিতর আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর জাগ্রত হয়ে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করার জন্য আল্লাহ তাকে সুযোগ দান করেন, তবে সে দু’দু’রাকাত করে নামায আদায় করবে। শেষে আর বিতর পড়বে না।

বিদ্বানদের মধ্যে একদল মত পোষণ করেছেন যে, বিতর আদায় করার পর যদি কেউ নফল নামায বা তাহাজ্জুদ পড়তে চায়, তবে সে এক রাকাত নামায পড়ে বিতরকে ভেঙ্গে দিবে (আগের এক রাকাত এবং এই রাকাত জোড়া হয়ে যাবে)। অতঃপর তাহাজ্জুদ শেষ করে বিতর আদায় করবে। ইমাম তিরমিযী বলেন, ছাহাবীদের মধ্যে কেউ কেউ এবং ইমাম ইসহাক এই মত পোষণ করেছেন। 

কিন্তু অধিকাংশ বিদ্বানের মতে প্রথম নিয়মটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা ইতোপূর্বে উল্লেখ হয়েছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বিতরের পরও নামায আদায় করেছেন। 

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ কোন লোক যদি প্রথম রাতে বিতর নামায আদায় করে নেয়। অতঃপর শেষ রাতে জামাতের সাথে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে সে কি ইমামের সাথে বিতর পড়বে না? যদি না পড়ে তবে হাদীছে বর্ণিত ফযীলত থেকে বঞ্ছিত হবে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ক্বিয়ামুল্লায়ল করবে, অতঃপর ইমামের সাথেই সে ফিরে যাবে, তবে তার জন্য সারা রাত্রি নফল নামায পড়ার ছওয়াব লিখা হবে। 


এর জবাব হচ্ছেঃ এই ব্যক্তি ইমামের এক রাকাত পড়ার সময় দু’রাকাত পড়ার নিয়ত করে দাঁড়াবে। ইমাম এক রাকাত শেষ করে যখন সালাম ফেরাবে, সে উঠে দাঁড়াবে এবং দ্বিতীয় রাকাত নামায পূর্ণ করে নিবে। আর এভাবেই সে ইমামের সাথে নামায শেষ করতে পারবে এবং এক রাতে দু’বারও বিতর পড়া হবে না। 

বিতর নামায লেখার উপর তথ্যসূত্রতথ্যসূত্রঃ

1) ছালাতুল মু’মেন- সাঈদ ক্বাহতানী।


2) বুগইয়াতুল মুতাতওয়্যে’ ফী ছালাতিত্‌ তাত্বাওউ- মুহাম্মাদ ওমর বাযমূল।

3) ছহীহ তারগীব ওয়া তারহীব- শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী, প্রকাশনাঃ মাকতাবাতুল মাআরেফ, রিয়াদ, ১৪২১ হিঃ।

4) ফিক্বহুস্‌ সুন্নাহ্‌, সাইয়েদ সাবেক।

5) আল মাউসূআ আল ফেক্বহিয়্যাহ্‌- হুসাইন আওদাহ্‌ আল আওয়াইশা, প্রকাশনাঃ দারুস্‌ ছিদ্দীক, জুবাইল। দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৪২৩ হিঃ।

6) নায়লুল আওতার- শাওকানী।

7) নাসবুর রায়া- ইমাম যায়লাঈ হানাফী।

8) মুন্তক্বাল আযকার- ডঃ খালেদ আল জুরাইসী, প্রকাশনাঃ আল জুরাইসী ইষ্টঃ। দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৪২৭ হিঃ।

9) ছালাতু তারাবীহ্‌- শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী।

10)  নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি- শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী, অনুবাদঃ আকরামুজ্জামান, প্রকাশনাঃ ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা, বাংলাদেশ। ২০০২ ইং।

11) মিশকাতুল মাসাবীহ, শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী, প্রকাশনাঃ আল মাকতাবুল ইসলামী, বইরুত, ১৪০৫ হিঃ।


পরিশেষে: সারকথা হলো, 

1) বিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ নামায।

2) বিতর নামায ওয়াজিব নয়, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌। তা পরিত্যাগ করা কোন মুমিনের জন্য উচিত নয়। 

3) বিতর নামাযের সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা হচ্ছে ১। 


4) তিন রাকাত বিতর নামায মাগরিবের মত করে আদায় করা বিধিসম্মত নয়। 

5) প্রমাণিত যে কোন দুআ ক্বনূত রুকুর আগে বা পরে পড়তে পারবে। 

6) দুআ ক্বনূত না জানলে কোন অসুবিধা নেই।

7) বিতর নামায অনিচ্ছাকৃতভাবে ছুটে গেলে ক্বাযা আদায় করতে পারবে।

8) বিতর শেষে ইচ্ছা করলে কখনো কখনো দু’রাকাত নামায আদায় করা যায়। কিন্তু সর্বদা করা উচিত নয়।


আমরা এখানে যে আলোচনা উল্লেখ করলাম তা নিতান্তই হাদীছগ্রন্থ সমূহ ও আমাদের পূর্বসূরী উলামাদের কিতাব থেকে গবেষণার ফল। আমাদের এ আলোচনার উপর যদি কারো কোন মন্তব্য বা প্রতিবাদ থাকে, লিখিতভাবে বা সরাসরি আমাদের নিকট তা উপস্থাপন করতে অনুরোধ রইল। আলোচনা ছহীহ হাদীছ মোতাবেক নিরপেক্ষ হলে গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকব। 

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে হক পথে পরিচালিত করুন, এবং ছহীহ সুন্নাহ থেকে প্রামণিত যে কোন বিষয় দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ ও আমল করার মানসিকতা দান করুন। আমীন॥ 


সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র জন্য 

যার অশেষ মেহেরবানীতে নেক কর্ম সমূহ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।


সংকলন ও গ্রন্থনা:

মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

দাঈ, জুবাইল দা‘ওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার

(শাওয়াল, ১৪২৭হি: =  ২০০৬ইং)


0 Comments:

BDFile Telegram channel