(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন রাতে শয্যায় যেতেন, তখন তাঁর দু’হাত একত্রিত করে হাতে ফুঁ দিতেন এবং সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়তেন। অতঃপর দু’হাত দ্বারা যতদূর সম্ভব শরীর মুছে ফেলতেন। মাথা, মুখ ও শরীরের সম্মুখভাগ মুছতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৮৬ পৃঃ, হা/২১৩২ ‘কুরআনের ফযীলত সমূহ’ অধ্যায়)।
(২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যদি
কেউ শয়নকালে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করে, তাহ’লে শয়তান তার
নিকটবর্তী হবে না (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত ১৮৫ পৃঃ, হা/২১২৩)।
(৩)
আবু মাস‘ঊদ আনছারী
(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে
কেউ রাতে সূরা বাক্বারাহ্র
শেষ দু’আয়াত পাঠ
করবে, তার জন্য আয়াত
দু’টিই যথেষ্ট হবে’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ১৮৫ পৃঃ, হা/২১২৫)। অর্থাৎ
উক্ত ব্যক্তি সারা রাত বিপদমুক্ত
থাকবে।
(৪)
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা ‘আলিফ
লাম তানযীল (সাজদাহ)’ এবং সূরা ‘তাবারাকাল্লাযী
(মুলক)’ পড়ে নিদ্রা যেতেন
(আহমাদ, তিরমিযী, সনদ ছহীহ হা/৩০৬৬; মিশকাত হা/২১৫৫)।
(৫)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ
বিছানায় শুতে যায়, তখন
সে যেন বলে,
উচ্চারণ
: বিইস্মিকা রব্বী ওয়ায¦‘তু জাম্বী ওয়া
বিকা র্আফা‘উহু ফাইন আম্সাক্তা
নাফসী র্ফাহ:াম্হা ওয়া ইন র্আসাল্তাহা-
ফাহ্ফায্:হা- বিমাতাহ্:ফায্ বিহী ‘ইবাদাকাস্ব্ স্ব-লিহীন। অর্থ
: ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার
নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম
এবং তোমার নামেই তা উঠাব। যদি
তুমি আমার আত্মাকে রেখে
দাও, তবে তার প্রতি
দয়া কর। আর যদি
তাকে ফেরৎ দাও, তাহ’লে তার প্রতি
লক্ষ্য কর, যেমনভাবে লক্ষ্য
কর তুমি তোমার নেক
বান্দাদের প্রতি’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, পৃঃ ২০৮, হা/২৩৮৪ ‘সকাল-সন্ধ্যায় পঠিত
দো‘আ’ অনুচ্ছেদ)।
(৬)
বারা ইবনু আযেব (রাঃ)
বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন শয্যায়
যেতেন তখন ডান পার্শ্বের
উপর শয়ন করতেন। অতঃপর
বলতেন,
উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হী ইলাইকা ওয়া ফাওওয়ায¦তু আমরী ইলায়কা ওয়ালজা’তু য:হরী ইলাইকা রগ্বাতাঁ ওয়া রহ্বাতান ইলাইকা লা-মাল্জাআ ওয়া লা-মাংজা মিংকা ইল্লা- ইলাইকা আমাংতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আংঝালতা ওয়া বিনাবিইয়িকাল্লাযী র্আসালতা। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি নিজেকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম। আমি তোমার দিকে মুখ ফিরালাম, আমার কাজ তোমার নিকট ন্যস্ত করলাম, আমার পৃষ্ঠদেশকে তোমার দিকেই ঝুকিয়ে দিলাম আগ্রহে ও ভয়ে। তোমার সাহায্যের প্রতি ভরসা করলাম। একমাত্র তোমার নিকট ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। আমি তোমার অবতীর্ণ কিতাবকে বিশ্বাস করি। আর ঐ নবীকে বিশ্বাস করি, যাকে তুমি নবী হিসাবে পাঠিয়েছ’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ যদি এ দো‘আ পাঠ করে তারপর রাতে মৃত্যুবরণ করে, সে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ২০৯ পৃঃ, হা/২৩৮৫)।
(৭)
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
(ছাঃ) যখন বিছানায় যেতেন
তখন বলতেন,
উচ্চারণ
: আল্হাম্দুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা- ওয়া
সাক্বানা ওয়া কাফা-না
ওয়া আওয়া-না- ফাকাম
মিম্মান লা- কা-ফিইয়া
লাহূ ওয়লা- মূবিয়া। অর্থ : ‘ঐ আল্লাহর প্রশংসা,
যিনি আামাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন, আমাদের
প্রয়োজন নির্বাহ করলেন এবং আমাদেরকে আশ্রয়
দিলেন। অথচ এমন কত
লোক রয়েছে, যাদের না আছে কেউ
প্রয়োজন নির্বাহক, আর না আছে
কোন আশ্রয়দাতা’ (মুসলিম, মিশকাত, ২০৯ পৃঃ, হা/২৩৮৬)।
(৮)
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী
করীম (ছাঃ) যখন শয়নের
ইচ্ছা করতেন, তখন হাত মাথার
নীচে রাখতেন। অতঃপর তিন বার বলতেন,
উচ্চারণ
: আল্ল-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা
তাব্‘আছু ‘ইবা-দাকা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি
আমাকে তোমার আযাব হ’তে
বাঁচিয়ে নিও, যেদিন তুমি
তোমার বান্দাদেরকে পুনর“ত্থিত করবে’
(তিরমিযী, মিশকাত, ২১০ পৃঃ, হা/২৪০০ ‘সকাল-সন্ধ্যায় ও
নিদ্রা যাওয়ার সময় দো‘আ’
অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।
(৯)
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী
করীম (ছাঃ) যখন রাতে
শয্যা গ্রহণ করতেন তখন তিনি তাঁর
হাত গালের নীচে রাখতেন। অতঃপর
বলতেন,
উচ্চারণ
: আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্:ইয়া-। অর্থ : ‘হে
আল্লাহ! আমি তোমার নামে
মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার
নামেই জীবিত হই’ (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত, ২০৮ পৃঃ, হা/২৩৮২)।
(১০) আলী (রাঃ) বলেন, একদা ফাতেমা (রাঃ) চাক্কি পিষতে তাঁর হাতে যে কষ্ট হয়, তা বলার জন্য রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে গেলেন। তিনি সংবাদ পেয়েছিলেন যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট যুদ্ধবন্দী গোলাম এসেছে। কিন্তু তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাক্ষাৎ পেলেন না। তখন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট তা উল্লেখ করলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) যখন আসলেন, তখন আয়েশা (রাঃ) তাঁকে এ সংবাদ দিলেন। আলী (রাঃ) বলেন, সংবাদ পেয়ে রাসূল (ছাঃ) আমাদের নিকটে আসলেন। তখন আমরা শয্যা গ্রহণ করেছি। আমরা উঠার চেষ্টা করলে তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। অতঃপর তিনি আমার ও তার মধ্যখানে এসে বসলেন, যাতে তাঁর পায়ের শীতলতা আমার পেটে অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিসের সংবাদ দিব না, যা তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে উত্তম। যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ৩৩ বার (সুব্হানাল্ল-হ), ৩৩ বার (আল্হামদুলিল্লাহ) এবং ৩৪ বার (আল্ল-হু আকবার) বলবে। এটা তোমাদের চাকর অপেক্ষা উত্তম হবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, ২০৯ পৃঃ, হা/২৩৮৭)।
0 Comments: