BDFile Telegram channel

১২ এপ্রি, ২০২৩

নবী-রসূলগণের দো‘আ : 

নবী-রসূলগণ এবং অতীতের মুমিনগণ সর্বদাই আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন। তাঁরা যখনই কোন সমস্যার সম্মুখীন হ’তেন, তখনই বিনয় ও ভীতি সহকারে আল্লাহর  নিকট প্রার্থনা করতেন। নিন্মে কুরআনে বর্ণিত নবী-রসূলগণের উলে−খযোগ্য দো‘আ বর্ণিত হ’ল- (১) রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) হিজরতের প্রাক্কালে বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রব্বী আদখিলনী মুদ্খালা স্বিদকিউ ওয়া আখরিজনী মুখরাজা স্বিদকি, ওয়াজ‘আললী মিললাদুনকা সুলত্ব-নান নাস্বীরা-। অর্থ : ‘হে প্রভু! আমাকে সত্যরূপে প্রবেশ করান এবং সত্য রূপে বের করুন এবং আমাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহায্য দান করুন’ (ইসরা ৮০)। 

(২) একদা ক্বাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূল (ছাঃ) কোন্ দো‘আটি বেশী পড়তেন। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসূল (ছাঃ) বেশী বেশী বলতেন, 

উচ্চারণ : রব্বানা- আ-তিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাহ, ওয়াক্বিনা- ‘আযা-বান না-র। অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ দান কর এবং তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে বাঁচাও’ (বাক্বারাহ ২০১; মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৪৪)। 

(৩) নবী করীম (ছাঃ) কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় তা গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে নবী আপনি বলুন, (রব্বি ঝিদনী ইলমা)। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন’। (৪) আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, আপনি বলুন! 

উচ্চারণ : রব্বির হামহুমা- কামা- রব্বায়ানী ছাগীরাঅর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’ (ইসরা ২৪)। 

(৫) আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া তাঁদের ভুলের ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রব্বানা য:লামনা- আংফুসানা- ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানাওয়াতারহামনা- লানাক‚নান্না- মিনাল খ-সিরীন। অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের উপর অনুগ্রহ না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব’ (আ‘রাফ ২৩)। (৬) নূহ (আঃ) অপরাধী বান্দাদের ধ্বংস কামনা করার পর বলেন, 

উচ্চারণ : রব্বির্গ্ফিলী ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিমান দাখালা বায়াতিয়া মু’মিনাওঁ, ওয়া লিলমু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-ত। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে এবং মুমিন পুর“ষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন’ (নূহ ২৮)। (৭) ইবরাহীম (আঃ) কা‘বা ঘর নির্মাণের পর বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রব্বানা- তাক্বব্বাল মিন্না- ইন্নাকা আংতাস সামী‘উল আলীম। রব্বানাওয়াজ‘আলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়া মিং যুররিইয়াতিনা- উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাকা ওয়া আরিনা মানা-সিকানা- ওয়াতুব ‘আলাইনা- ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুর রহীম। অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের (প্রার্থনা) কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তভূক্ত কর এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদেরকে হজ্জের রীতি-নীতি বলে দাও এবং তুমি আমাদের তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু’ (বাক্বারাহ ১২৭-২৮)। (৮) ইবরাহীম (আঃ) পিতা-মাতা, ছেলে-মেয় ও মুমিনদের প্রার্থনায় বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বিজ‘আলনী মুক্বীমাস্ব স্বলা-তি ওয়া মিন যুররিইয়াতী রব্বানাওয়াতাক্বাব্বাল দো‘আ- রব্বানাগ ফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াক‚মুল হি:সাব। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ছালাত ক্বায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দো‘আ কবুল করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যে দিন হিসাব ক্বায়েম হবে’ (ইবরাহীম, ৪০-৪১)। 

(৯) ইবরাহীম (আঃ) প্রার্থনা করেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি হু:কমাওঁ ওয়ালহিক্বনী বিস্ব্ স্বালিহীন ওয়াজ‘আল লী লিসানা ছিদক্বিন ফীল আ-খিরীন ওয়াজ‘আলনী মিওঁ ওয়ারাছাতি জান্নাতিন নাঈম। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে হিকমত দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের অন্তভূক্ত করুন। (হে প্রভু!) আপনি পরকালে আমাকে সত্যবাদীদের অন্তভূক্ত করুন এবং ‘নাঈম’ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করুন’ (শু‘আরা ৮৩-৮৫)। (১০) মূসা (আঃ) ফেরাঊনের নিকট গমনের সময় বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রব্বিশরহ:লী স্বদরী ওয়া ইয়াসসিরলী আমরী ওয়াহ:লুল উক্বদাতাম মিল লিসা-নী ইয়াফক্বাহূ ক্বওলী। অর্থ : ‘হে আমার পালকর্তা! আমার ব¶ প্রশস্ত করেদিন আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বহা ২৪-২৮)।

 (১১) সুলায়মান (আঃ) এক উপত্যকায় পৌঁছলে এক পিপিলিকা বলল, হে পিপিলিকার দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথা সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবে। তাঁর এই কথা শুনে সুলায়মান (আঃ) মুচকি হেসে বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : রব্বি আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়্যা ওয়া ‘আলা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আ‘মালা স্ব-লিহান তারয-হ, ওয়া আদখিলনী বিরহ্:মাতিক, ফী ‘ইবা-দিকস্ব্ স্ব-লিহীন। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যেন আমি তোমার সেই নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যেন আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তভূক্ত কর’ (নামল ২০)। 

(১২) যাকারিয়া (আঃ) নিম্নোক্তভাবে সন্তান প্রার্থনা করেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুররিইয়াতান ত্বাইয়িবাতান ইন্নাকা সামী‘উদ দো‘আ। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনার প¶ থেকে আমার জন্য একটি সুসন্তান দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ (আলে ইমরান ৩৮)। 

উচ্চারণ : রাব্বি লা তাযারনী ফারদাওঁ ওয়া আনতা খায়র“ল ওয়া-রিছীন। অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা ছাড়বেন না। আপনিই উত্তম উত্তরাধিকারী’ (আম্বিয়া ৮৯)। (১৩) ইউসুফ (আঃ) প্রার্থনা করেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বি ক্বাদ আ-তায়তানী মিনাল মুলকি ওয়া‘আল্লামতানী মিন তাবীলিল আহা-দীছি ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযে আনতা ওয়ালিইয়ী ফীদ দুনিয়া ওয়াল আ-খিরাতি তাওয়াফ্ফানী মুসলিমাওঁ ওয়া আলহিক্বনী বিস্ব স্বালেহীন। অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের তাবীর শিখিয়ে দিয়েছেন। আপনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, ইহকাল ও পরকালে আপনি আমার অভিভাবক। অতএব আমাকে মুসলিম করে মৃত্যু দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের অন্তভূক্ত করুন’ (ইউসুফ ১০১)। 

(১৪) লূত (আঃ) নিন্ম লিখিত ভাবে প্রার্থনা করেছেন, 

উচ্চারণ : রাব্বি নাজ্জিনী ওয়া আহলী মিম্মা ইয়া‘মালূনা। অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এবং আমার পরিবারকে তাদের ঘৃণিত কর্ম হ’তে রক্ষা করুন’ (শু‘আরা ১৬৯)। (১৫) আইয়ূব (আঃ) বলেছিলেন, 

উচ্চারণ : আন্নী মাস্সানীয়াশ শায়ত্বানু বিনুস্ববিউঁ ওয়া আযাবিন। অর্থ : ‘নিশ্চয়ই শয়তান আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্ট পৌঁছিয়েছে’ (ছোয়াদ ৪১)। 

উচ্চারণ : আন্নী মাস্সানীয়ায যুরর“ ওয়া আংতা আরহামুর র-হিমীন। অর্থ : ‘নিশ্চয়ই অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে, আর তুমি শ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (আম্বিয়া ৮৩)। (১৬) আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-কে নিæ বর্ণিত দো‘আ পাঠের নির্দেশ দিয়েছিলেন, 

(১) উচ্চারণ : রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়াআংতা খইর“র র-হি:মীন। 

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা কর ও দয়া কর, আর তুমিতো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াময়’ (মুমিনূন ১১৮)। 

(২) উচ্চারণ : রব্বি ইন্নী যলামতু নাফসী ফাগফিরলী। অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার প্রতি যুলুম করেছি। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন’ (ক্বাছাছ ১৬)। 

উচ্চারণ : রব্বিশরহ:লী স্বদরী ওয়া ইয়াসসিরলী আমরী ওয়াহ:লুল উক্বদাতাম মিল লিসা-নী ইয়াফক্বাহূ ক্বওলী। অর্থ : ‘হে আমার পালকর্তা! আমার ব¶ প্রশস্ত করেদিন আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বহা ২৪-২৮)। (১৭) আছিয়া (রাঃ) প্রার্থনা করেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বিবনী লী ‘ইংদাকা বাইতান ফিল জান্নাতি ওয়া নাজ্জিনী মিং ফির‘আওনা ওয়া আমালিহ ওয়া নাজ্জিনী মিনাল ক্বাওমিয যা-লিমীন। অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করুন এবং আমাকে উদ্ধার করুন ফিরা‘আউন ও তার দুষ্কৃতি হ’তে এবং আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হ’তে’ (তাহরীম ১১)। 

(১৮) তালূত ও তাঁর সাথীগণ কাতর কন্ঠে প্রার্থনা করেছিলেন, 

উচ্চারণ : রাব্বানা আফরিগ ‘আলাইনা স্বব্রাওঁ ওয়া ছাব্বিত আক্বদা-মানা ওয়ংস্বুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কা-ফিরীন। অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন, আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন কাফির স¤প্রদায়ের বির“দ্ধে’ (বাক্বারাহ ২৫০)। 


0 Comments:

BDFile Telegram channel