নামজারী বা মিউটেশন হলো জমির মালিকানা পরিবর্তনের একটি আইনি প্রক্রিয়া। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
নামজারী বা মিউটেশন হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তন করা। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়।
নামজারির গুরুত্ব
নামজারী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমির মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নামজারী করা না হলে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোন দাবি করা যায় না। নামজারি না থাকলে জমি ক্রয়-বিক্রয়, খাজনা প্রদান, ঋণ গ্রহণ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
নামজারির প্রকারভেদ
নামজারির প্রকারভেদ নিম্নরূপ:
- বিক্রয়ের মাধ্যমে নামজারি: জমি ক্রয়ের পর ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে দলিলপত্র গ্রহণ করার পর নামজারি করতে হয়।
- উত্তরাধিকার সূত্রে নামজারি: কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীদের নামে নামজারি করতে হয়।
- দানের মাধ্যমে নামজারি: কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তিকে জমি দান করলে দানপত্রের মাধ্যমে নামজারি করতে হয়।
- বন্দোবস্তের মাধ্যমে নামজারি: সরকার কোন ব্যক্তিকে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে দিলে বন্দোবস্তের দলিলপত্রের মাধ্যমে নামজারি করতে হয়।
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নামজারির জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:
- নামজারি আবেদনপত্র
- রেজিস্ট্রি দলিলপত্রের মূল কপি ও সত্যায়িত অনুলিপি
- খাজনা রশিদের মূল কপি ও সত্যায়িত অনুলিপি
- ওয়ারিশান সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- জমির দখল দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- প্রয়োজনীয় ফি
নামজারির জন্য আবেদন পদ্ধতি
নামজারির জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের নির্ধারিত স্থানে জমির বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
নামজারির ফি
নামজারির ফি জমির শ্রেণিভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত, জমির মূল্যের ০.৫% থেকে ১% হারে ফি দিতে হয়।
নামজারির সময়সীমা
নামজারির আবেদন জমা দেওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে নামজারির কাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে, জটিল ক্ষেত্রে এই সময়সীমা বাড়তে পারে।
নামজারির নিয়মকানুন
নামজারির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়:
- নামজারির আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিতে হবে।
- নামজারির ফি সঠিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।
নামজারির সুবিধা
নামজারির সুবিধা নিম্নরূপ:
- জমির মালিকানা নিশ্চিত করা যায়।
- জমি ক্রয়-বিক্রয়, খাজনা প্রদান, ঋণ গ্রহণ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
- জমি সংক্রান্ত কোন দাবি করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
নামজারির অসুবিধা
নামজারির অসুবিধা নিম্নরূপ:
- নামজারির জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় হয়।
- নামজারির জন্য জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
নামজারির অনলাইন আবেদন
বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নামজারির জন্য অনলাইন আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে আবেদন করতে হলে প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে "নামজারি" অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর একটি ফর্ম পূরণ করে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস আসবে। এসএমএসে আবেদনের নম্বর উল্লেখ থাকবে। আবেদনের নম্বর দিয়ে আবেদনের অবস্থা জানা যাবে।
নামজারির জন্য সহায়তা
নামজারির জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আইনজীবী আবেদনপত্র তৈরি, দলিলপত্র যাচাই-বাছাই, তদন্তের সহায়তা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারেন।
উপসংহার
নামজারী হলো জমির মালিকানা পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। নামজারির মাধ্যমে জমির মালিকানা নিশ্চিত করা যায় এবং জমির অধিকার আইনগতভাবে সুরক্ষিত থাকে। তাই জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে অবশ্যই নামজারি করা উচিত।
0 Comments: