সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্র হলো একটি আনুষ্ঠানিক নথি যা একজন রোগীকে হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়। এই ছাড়পত্রে রোগীর নাম, ঠিকানা, ভর্তি ও ছাড়ের তারিখ, চিকিৎসার বিবরণ, পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশনা ইত্যাদি তথ্য থাকে।
ছাড়পত্রের বিবরণ
ছাড়পত্রের প্রথম অংশে রোগীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, পেশা, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। দ্বিতীয় অংশে রোগীর ভর্তি তারিখ, ছাড়ের তারিখ, রোগের ধরন, উপসর্গ, চিকিৎসার বিবরণ, অপারেশন হলে অপারেশনের নাম ও তারিখ ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। তৃতীয় অংশে পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশাবলী থাকে। যেমন, কত দিন পর কী কী পরীক্ষা করাতে হবে, কী কী ওষুধ সেবন করতে হবে, কোনো বিশেষ খাবারের বা অভ্যাসের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আছে কি না ইত্যাদি।
ছাড়পত্রের গুরুত্ব
ছাড়পত্রটি রোগীর চিকিৎসার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি রোগীর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। ছাড়পত্রের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসার প্রকৃতি, রোগের ধরন, চিকিৎসার বিবরণ ইত্যাদি তথ্য জানা যায়। এছাড়াও, ছাড়পত্রটি রোগীর স্বাস্থ্য বীমা, সরকারি সুবিধা ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।
ছাড়পত্রের প্রদান
রোগী যখন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড় পায়, তখন চিকিৎসক ছাড়পত্র প্রদান করেন। ছাড়পত্রটি রোগীর হাতে প্রদান করা হয়। ছাড়পত্রটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় সংগ্রহ করা যায়।
ছাড়পত্রের অংশসমূহ
সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্র সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, ঠিকানা, বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতীয়তা ইত্যাদি থাকে। দ্বিতীয় অংশে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য থাকে। এই অংশে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো থাকে:
- রোগীর সমস্যা
- রোগীর শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল
- রোগীর জন্য প্রদত্ত চিকিৎসা
- রোগীর পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশনা
ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা
সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্রের বেশ কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ছাড়পত্র রোগীকে নিম্নলিখিত সুবিধা প্রদান করে:
- ছাড়পত্রের মাধ্যমে রোগী হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পায়।
- ছাড়পত্রের মাধ্যমে রোগী পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যেতে পারে।
- ছাড়পত্রের মাধ্যমে রোগী সরকারি বা বেসরকারি কোনো সুবিধা পেতে পারে।
ছাড়পত্রের সত্যায়িতকরণ
সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্র অবশ্যই একজন চিকিৎসক দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে। ছাড়পত্রটি সত্যায়িত করার পর একজন রেজিস্টার্ড নার্স বা কর্মকর্তা স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করে।
ছাড়পত্রের সংরক্ষণ
সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্রটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এই নথিটি রোগীর চিকিৎসার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এই নথিটি অবশ্যই সাবধানে সংরক্ষণ করা উচিত।
উদাহরণ
নিচে একটি সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্রের নমুনা দেওয়া হলো:
রোগীর ছাড়পত্র
ফরম নং-৮১৭
হাসপাতাল: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
রোগীর নাম: মোহাম্মদ আলী
বয়স: ৫০ বছর
লিঙ্গ: পুরুষ
ধর্ম: ইসলাম
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
ঠিকানা: মিরপুর, ঢাকা
ভর্তি তারিখ: ২০২৪-০১-০১
ছাড়ের তারিখ: ২০২৪-০২-০১
রোগীর সমস্যা: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি
শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল:
- রক্তের শর্করার মাত্রা: ১০০ মিগ্রা/ডেসিলিটার
- রক্তচাপ: ১২০/৮০ মিমি/মিটার
- হৃদস্পন্দন: ৭০ বার/মিনিট
- শ্বাস-প্রশ্বাসের হার: ১৮ বার/মিনিট
চিকিৎসা:
- ওষুধ: গ্লাইবেনক্লামাইড, গ্লুকোজ টেস্ট স্ট্রিপস
- ইনসুলিন: প্রয়োজনে
পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশনা:
- নিয়মিত ওষুধ সেবন
- নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা
- সুষম খাদ্য গ্রহণ
- নিয়মিত ব্যায়াম
সত্যায়িতকরণ:
চিকিৎসক: ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
রেজিস্টার্ড নার্স: মোসাম্মৎ আফরোজা
সিল: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
সরকারি হাসপাতালের রোগীর ছাড়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি রোগীর চিকিৎসার ইতিহাসের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বহন করে। এটি রোগীর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য।
0 Comments: